ফাহিম উদ্দিন: বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন ভাবনার কারিগর

August 24, 2025
A smiling man with short black hair and arms crossed against a bright orange background.
©UNDP Bangladesh

ঢাকার ব্যস্ত নগরজীবনে বসে ফাহিম উদ্দিন ভাবছেন আরও পরিচ্ছন্ন, স্মার্ট ও জনবান্ধব এক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা। গার্বেজম্যান লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ফাহিম পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক, অনুসরণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্লাস্টিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা গঠনের কাজ করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের কাছে সঠিক প্রযুক্তি পৌঁছালে আবর্জনাও সম্ভাবনা হয়ে ধরা দেয়।

স্থাপত্য, পরিবেশ বিজ্ঞান ও টেকসই নগর পরিকল্পনার ওপর উচ্চতর শিক্ষা নেওয়া ফাহিম তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে কাজে রূপান্তর করে দেখিয়েছেন। গার্বেজম্যানের মাধ্যমে তিনি গৃহস্থালি পর্যায়ে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বর্জ্য পৃথক করার পদ্ধতি, ডিজিটাল ট্র্যাকিং টুল ও কিউআর কোডযুক্ত বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা চালু করেছেন, যা প্লাস্টিক পুনরুদ্ধারের প্রতিটি ধাপ রিয়েল টাইমে পর্যবেক্ষণ করে। তার ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি (এমআরএফ) সঠিকভাবে বর্জ্য বাছাই ও সেগুলোকে পুনর্ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে অনানুষ্ঠানিক বর্জ্য সংগ্রহকারীদের আনুষ্ঠানিক রিসাক্লিং বাজারের সাথে সম্পৃক্ত করেছে।

বিভিন্নপার্টনারশিপের মাধ্যমে ফাহিমের কাজ জাতীয় পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। এইচ অ্যান্ড এম গ্রুপ ও ইল্টেলক্যাপ-এর সাথে ইউনিডো-সুইচটুসিই প্রজেক্টের মাধ্যমে ফাহিম পিইটি বোতলের সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরির কাজ করেছেন। বিএটি বাংলাদেশের সাথে মিলে তিনি ৪৫+ কীটনাশকের প্যাকেট সংগ্রহের পয়েন্ট স্থাপন করেছেন। এখন পর্যন্ত ৩৫০ টনেরও বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছেন তিনি। এছাড়া ফাহিমের কাজের ফলেই ১ হাজারেরও বেশি অনানুষ্ঠানিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী এখন একটি নিরাপদ ও গোছানো পদ্ধতিতে কাজ করেন।

ফাহিম বলেন, ‘আমরা শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই করছি না, জবাবদিহি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের সমাজ, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন নীতির মধ্যে যোগসূত্র ঘটানো যায়, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’

ইয়ুথকোল্যাব এর স্বীকৃতি এবং ইউএনডিপি-এর জাতীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ফাহিম দেশের রিসাইক্লিং খাতে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য একটি জাতীয় ফ্রেমওয়ার্ক তৈরিতেও যুক্ত ছিলেন। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তথ্যভিত্তিক সমাধান হিসেবে তার মডেল এখন এনজিও ও স্থানীয় সরকারগুলো অনুসরণ করছে।

যেদেশে একসময় বর্জ্যের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো ছিল অদৃশ্য, সেখানে ফাহিম প্রমাণ করেছেন, তথ্য, পরিকল্পনা ও স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে শুধু বিদ্যমান ব্যবস্থা নয়, বদলে দেওয়া যায় এর ভেতরে থাকা জীবনগুলোকেও।