শেফালি বেগম: টিকে থাকার লড়াই পেরিয়ে ক্ষমতায়নের উদাহরণ

August 17, 2025
©UNDP Bangladesh

পিরোজপুরের শরিকতলা ইউনিয়নের এক শান্ত, ছায়া সুনিবিড় গ্রাম। এই গ্রামেরই ৩০ বছর বয়সী শেফালি বেগম হয়ে উঠেছেন দৃঢ়তার এক প্রতীক। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া শেফালির পড়ালেখার যাত্রা সপ্তম শ্রেণিতেই থেমে যায়, বাল্যবিবাহের শিকার হন তিনি। ২০২৩ সালে তার জীবনে নেমে আসে আরও অন্ধকার। তার দিনমজুর স্বামী স্ট্রোক করেন, হয়ে পড়েন শয্যাশায়ী। মুহূর্তের মধ্যেই শেফালি হয়ে ওঠেন তার সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন।

আয়েরঅন্য কোনো উৎস না থাকায় শেফালি নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য রান্না করার কাজ শুরু করেন। তবে প্রতিদিন কাজ পাওয়া যেতো না। কিন্তু ক্ষুধা তো আর তা মানতো না! চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে পরিচালিত কার্যক্রম ‘স্বপ্ন ফেইজ টু’ এর একজন সুবিধাভোগী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই শেফালির এই দুর্দিন কেটে যেতে থাকে।

শেফালি২৮০ দিনের মতো জনসেবামূলক কাজে অংশ নেন এবং বিভিন্ন দক্ষতা ও উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর সঞ্চয় করা ৭ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে তিনি মুরগি কেনেন। প্রথমদিকে ক্ষতি হলেও শেফালি আবার বিনিয়োগ করেন। বর্তমানে শেফালির ছোট্ট খামারে ৩৯টি মুরগি ও ১২টি হাঁস রয়েছে। আর এর মধ্য দিয়েই তার পরিবারের আয়ের পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হচ্ছে।

শেফালিশিক্ষাকে শক্তিতে পরিণত করছেন, নিজের সন্তানদের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের ছেলেমেয়েদেরও পড়াচ্ছেন তিনি। বর্তমানে ‘স্বপ্ন’ এর অধীনে ফরমাল সেক্টর ট্রেনিং এ অংশ নেওয়া শেফালি নিজেকে পোশাক খাতে চাকরির জন্য যোগ্য করে তুলছেন।

‘আমি আমার মেয়েকে বড় হয়ে শিক্ষক বানাতে চাই। আমি নিজে যে জীবন পাইনি, ওদের সেই জীবন দিতে চাই। আমি এখন নিজে নিজেই সব কিছু করি। আমার মনে হয়, আমি একদিন অন্যদেরও সাহায্য করতে পারবো,’ বলছিলেন শেফালি।

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের ভবিষ্যৎ কর্মী হিসেবে শেফালির এই গড়ে ওঠার যাত্রা এটাই প্রমাণ করে, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে পরিচালিত সামাজিক সুরক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম দারিদ্র্যের চক্র ভেঙে দিতে পারে। এর ফলে নিশ্চিত হওয়া নারীর ক্ষমতায়ন বদলে দিতে পারে তাদের সমাজকেও।