আব্দুর রহিম: নিরাপদ অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে উপকূলের তরুণদের ক্ষমতায়নের কারিগর

August 13, 2025
A young man in a red shirt against a red background, with a quote beside him.
©UNDP Bangladesh

ঘূর্ণিঝড়প্রবণদ্বীপাঞ্চল ভোলার অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণে। দারিদ্র্যের চক্র থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় থাকা এখানকার তরুণদের কাছে আশার এক প্রদীপ হয়ে উঠেছেন আব্দুর রহিম। এটুআই ও ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত আমিনাবাদ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ২০১০ সাল থেকে আব্দুর রহিম একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেছেন। এসময় উপকূলীয় এ অঞ্চলের মানুষের জলবায়ু ঝুঁকি, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সীমিত সুযোগের কারণে সৃষ্ট অবর্ণনীয় কষ্ট তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন।

সেখানকারমানুষের এই সমস্যাগুলো দূর করার লক্ষ্যে আব্দুর রহিম প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্বপ্নবীজ’, যেখান থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে সহ-প্রতিষ্ঠা করেন ‘গ্লোবালঅপরচুনিটি নেটওয়ার্ক’ বা ‘গো নেটওয়ার্ক’ নামেএকটি লিমিটেড কোম্পানি, যারা দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে কাজ করে।

তার নেতৃত্বে‘স্কিলস্ ফিউশন সেন্টার’ গঠনেরমাধ্যমে কম্পিউটার, ড্রাইভিং ও ভাষা দক্ষতার মতো কারিগরি খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শুরু হয়। এখান থেকে একটি নতুন ঋণ ব্যবস্থাও গড়ে ওঠে: অভিবাসনপ্রত্যাশীরা প্রথমে ঋণ নেন। এরপর বিদেশে গিয়ে চাকরি পাওয়ার পর সহজ কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধ করেন। ডিজিটাল সেন্টারের প্রবাসী হেল্পডেস্ক এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাসপোর্ট তৈরি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও ভ্রমণসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র সংগ্রহে সহায়তা করে।

২০২২থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ২১৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী আব্দুর রহিমের এই সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ১৮১ জন ইতোমধ্যে নিরাপদে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অদক্ষ কর্মীদের তুলনায় তারা আয়ও করছেন অনেক বেশি, যা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। আব্দুর রহিমের এই উদ্যোগটি স্থানীয় পর্যায়ে আরও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করেছে, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছে এবং পরিবারগুলোকে কঠিন শর্তের ঋণ ও জায়গা-জমি বিক্রির হাত থেকেও রক্ষা করেছে।

রহিম নিজেই বলছিলেন, ‘আমি উপকূলেরই মানুষ। তাই অভাব আর প্রকৃতির সাথে এই মানুষগুলোর প্রতিদিনের লড়াইয়ের গল্পটা আমি জানি। গো নেটওয়ার্ক ও স্বপ্নবীজ-এর মাধ্যমে প্রতিবছর অন্তত ৭০ জন মানুষ নিরাপদে বিদেশে যাচ্ছে এবং সেখান থেকে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এমন প্রান্তিক একটা অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নপূরণের সঙ্গী হতে পেরে আমার যে আনন্দ হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’