যুব উদ্যোক্তাদের জন্য স্মার্ট নীতি ও সহায়ক পরিবেশ অপরিহার্য

July 17, 2025
Four speakers seated on stage at a workshop on youth entrepreneurship, with banners behind them.
©UNDP Bangladesh

বাংলাদেশের যুব উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হলে স্মার্ট নীতি, সহজ, অর্থায়ন এবং একটি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি—আজ (১৭ জুলাই ২০২৫) বিডা মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত “যুব উদ্যোক্তা: বিনিয়োগ, নীতি ও ইকোসিস্টেম” শীর্ষক এক জাতীয় কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-এর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “আমরা এমন এক প্রজন্মকে দেখছি যারা কারো অনুমতির অপেক্ষায় নেই, বরং নিজেদের স্বপ্ন ও প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই শক্তিকে আমাদের নীতিগত সমর্থন, কাঠামোগত সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “বাংলাদেশের তরুণরা প্রতিদিন নতুন উদ্ভাবন করছে। এখন প্রয়োজন একটি কার্যকর ইকোসিস্টেম—যেখানে অর্থায়ন সহজ হবে, শিক্ষা ব্যবস্থায় স্টার্টআপ চিন্তাধারা অন্তর্ভুক্ত হবে এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও মূলধন প্রবাহ জোরদার হবে। সঠিক পদক্ষেপ এর মাধ্যমে তরুণদের নেতৃত্বে একটি নতুন প্রবৃদ্ধির যুগে আমরা প্রবেশ করতে পারি।”

কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “তরুণ উদ্যোক্তারা আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাদের বিকাশে স্মার্ট নীতি, সহজ অর্থায়ন এবং একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন।”

গত এক দশকে ১,২০০-র বেশি টেক-নির্ভর স্টার্টআপ প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ তুলেছে এবং ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তা সত্ত্বেও, খুব কম স্টার্টআপই সফলভাবে অগ্রসর হতে পেরেছে,” উল্লেখ করেন সোনালি দয়ারত্নে, ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি, ইউএনডিপি বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, “এর কারণ প্রতিভার অভাব নয়, বরং অর্থায়ন, অবকাঠামো, নীতিমালা ও আঞ্চলিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা।”

লাইটক্যাসেল পার্টনার্স-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল আমিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, যেখানে তিনি বিনিয়োগ কাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং নীতিমালার সঙ্গে তরুণ উদ্যোগের সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

এছাড়াও কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের TEPP-II এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ড. মেহরুনা ইসলাম চৌধুরী পরবর্তীতে আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ।কান্ট্রি ইকোনমিক অ্যাডভাইজার ওয়াইস প্যারে এবং বিডা’র ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রচি। তাঁরা বলেন, উন্মুক্ত সংলাপ এবং তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণই হবে কাঙ্ক্ষিত নীতি সংস্কারের চাবিকাঠি।

কর্মশালায় ১০০-এর বেশি যুব উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক ও উন্নয়ন অংশীদার অংশগ্রহণ করেন। তারা উদ্ভাবন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথ রচনা করতে যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত ও সমাধানের উপায় বের করেন।

অংশগ্রহণকারীরা মূলত যে চ্যালেঞ্জগুলোর কথা তুলে ধরেন, তার মধ্যে রয়েছে—অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, প্রাথমিক পর্যায়ের বিনিয়োগের অভাব, জটিল নীতিকাঠামো এবং দক্ষতা উন্নয়নের ঘাটতি।

প্রস্তাবিত সমাধানগুলোর মধ্যে ছিল—ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গঠন, রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স, ক্রেডিট গ্যারান্টি এবং একটি জাতীয় স্টার্টআপ কৌশলপত্র প্রণয়ন । কৃষি উদ্যোগ, পর্যটন, ফিনটেক এবং সবুজ প্রযুক্তির মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ খাতগুলোতেও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা জোরালোভাবে উঠে আসে।

কর্মশালার শেষ অংশে বিডা, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইসিটি বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে একটি পলিসি রোডম্যাপ তৈরির অঙ্গীকার ব্যক্ত করে—যেখানে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে ।

উল্লেখ্য, এই কর্মশালাটি যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত Transformative Economic Policy Programme (TEPP-II)-এর অধীনে বিডা ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়।