টিকে থাকার সংগ্রাম থেকে সফলতার পথে যাত্রা

September 9, 2025
©UNDP Bangladesh

হতাশা থেকে আশার আলো: সহনশীলতা ও ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে আয়েশার এগিয়ে চলা

১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া একটি মেয়ে তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, কিন্তু প্রথম পাবলিক পরীক্ষার দিনেই তার গর্ভপাত হয়ে যায়। কখনও কল্পনা করেছেন এমন পরিস্থিতি? অপরদিকে মানসিক প্রতিবন্ধীতায় ভোগা স্বামী তাকে প্রয়োজনীয় কোন সহায়তা করতে সক্ষম না। এমন একটি মেয়ের জীবনে কী হয়?

এটি উত্তর-মধ্য বাংলাদেশের জামালপুরের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকের গল্প। নীরব সহনশীলতা ও অটল সংকল্পের এক গল্প, যার সাথে যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি)সহযোগিতা।

আঘাত, অসহায়ত্ব কোন কিছুতেই আয়েশা হার মানেননি। এরপর তিনি জীবনের এক দিশা খুঁজে পান ‘স্বপ্ন’-র মাধ্যমে, যা সামাজিক ক্ষমতায়নের একটি উদ্যোগ। বাংলাদেশ সরকার, সুইডেন দূতাবাস এবং মেরিকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় এটির বাস্তবায়ন করছে ইউএনডিপি। ‘স্বপ্ন’ গণপূর্ত খাতে কর্মসংস্থান, জীবন দক্ষতা এবং আর্থিক বিষয়ে শিক্ষার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অতিদরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে সহযোগিতা করে। আয়েশা প্রথমে গণপূর্ত কাজে যোগ দেন, পাশাপাশি নেন দক্ষতা ও আর্থিক সাক্ষরতার প্রশিক্ষণ। মাত্র এক বছরের মধ্যে একটু একটু করে বেতনের টাকা সঞ্চয় করে তিনি একটি ছোট কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। বলা যায়, আয়েশা শুধু পোশাকই নয়, সেলাই করেছেন নিজের নতুন ভবিষ্যতও।

এখন তিনি ৪ বছর বয়সী এক ছেলের মা। তার ব্যবসা ক্রমশ বড় হচ্ছে, সেই সাথে বড় হচ্ছে তার স্বপ্নও। সম্প্রতি আয়েশা স্বপ্নের আনুষ্ঠানিক খাতের আবাসিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এটি শিল্পখাতে দক্ষতা বিষয়ক দুই মাসের একটি কোর্স, যা এক বছরে তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে। স্বপ্ন প্রকল্পটি এখন পোশাকশিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে আয়েশার মতো নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে।

৪০ দিন ধরে আয়েশা একটি পেশাদার, কাঠামোবদ্ধ পরিবেশে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে; এখন তিনি সহজেই টি-শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক সেলাই করতে পারেন। দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমার স্বপ্নগুলো মাঝপথে ভেঙ্গে গিয়েছিল, তবে আমি নিশ্চিত করব আমার ছেলে যেন সেইসব অর্জন করে যা আমি পারিনি।”

বর্তমানে ‘স্বপ্ন’ প্রকল্পের যে প্রায় ২৫ শতাংশ নারী আনুষ্ঠানিক খাতের প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন, আয়েশা তাদেরই একজন। এটা এক ক্রমবর্ধমান দল, যেখানে নারীরা নতুন দক্ষতা ও নতুন আশার আলো নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষ হলে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে একটি স্থায়ী চাকরি নিশ্চিত করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

‘স্বপ্ন’-এর সহায়তায় আয়েশা আর শুধু টিকে নেই, বরং এগিয়ে চলছেন সাফল্যের পথে। তার গল্প আমাদের শক্তভাবে মনে করিয়ে দেয় যে সঠিক সহযোগিতা পেলে মানুষের জীবনের শুরুটা যতই কঠিন হোক না কেন, তারা গড়ে তুলতে পারে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।