জলবায়ু নীতিতে লিঙ্গ সংবেদনশীলতা অন্তর্ভুক্তির তাগিদ জাতীয় কর্মশালায়

May 26, 2025
Four people seated at a table with a blue tablecloth, discussing climate solutions.

“টুওয়ার্ডস ইনক্লুসিভ ক্লাইমেট সলিউশনস: ইন্টেগ্রেটিং জেন্ডার ইনটু ন্যাশনাল ক্লাইমেট পলিসিস অ্যান্ড অ্যাকশন ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি জাতীয় কর্মশালা আজ ঢাকার সিরডাপ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিল জাতীয় জলবায়ু নীতি ও কর্মসূচিতে লিঙ্গসমতাকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই জলবায়ু শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-র জেন্ডার-রেস্পন্সিভ কোস্টাল এডাপটেশন (GCA) প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ও গ্রীন  ক্লাইমেট  ফান্ড (GCF)-এর সহায়তায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে নতুন একটি লিঙ্গ-সংবেদনশীল অভিযোজন প্রশিক্ষণ মডিউল এবং ১২টি মন্ত্রণালয়ে পরিচালিত নীতিগত ঘাটতি বিশ্লেষণের মূল ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। এটি জাতীয় জলবায়ু কৌশলে লিঙ্গ সমতা সংযুক্তির পথে একটি অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত হয়।

কর্মশালার প্রধান অতিথি, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি বলেন, 'উপকূলের নারীরা শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহ্য করেন না—তাঁরাই পরিবর্তনের নেতৃত্বও দেন। এই কর্মশালাটি আমাদের নীতিমালাগুলোকে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে সাহায্য করছে এবং জেন্ডার কে জলবায়ু উদ্যোগের কেন্দ্রে এনে দিচ্ছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।'"

বিশেষ অতিথি ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান বলেন, 'জিসিএ প্রকল্পের অধীনে তৈরি প্রশিক্ষণ মডিউল ও নীতিমালাগুলো আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এতে লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবে এবং আমাদের জাতীয় উদ্যোগগুলো আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর হয়ে উঠবে।'

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল বলেন, 'জলবায়ু অর্থায়ন ও লিঙ্গ সমতা—দু’টিই বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকার। এই দুটি বিষয়কে একসাথে দেখলে নিশ্চিত করা যায়, আমাদের বিনিয়োগগুলো হবে আরও কার্যকর ও টেকসই।'

ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ (ভারপ্রাপ্ত) সোনালি দয়ারত্নে বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে নারীদের সম্পৃক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত। আজকের এই আয়োজন শুধু নীতিমালা ও কৌশল যাচাইয়ের জন্য নয়—এটি প্রতিষ্ঠান ও জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যতের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।"

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান সহায়ক উপকরণ উপস্থাপন করা হয়—“জেন্ডার অ্যান্ড ক্লাইমেট: টুওয়ার্ডস একুয়িটেবল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ট্রান্সফরমেশন” শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য “স্ট্রেংথেনিং জেন্ডার-রেসপনসিভ ক্লাইমেট অ্যাকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যাডভোকেসি, ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড একসেস টু গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড” গাইড, এবং “লিঙ্গ ও জলবায়ু বিষয়ক নীতিগত সংযুক্তি” নিয়ে একটি নির্দেশনাপত্র।

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন জিসিএ প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো. আবদুল হাই আল মাহমুদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর সহকারী রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম আসাদুজ্জামান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর জেন্ডার ফোকাল।

জিসিএ প্রকল্প উপকূলীয় জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়, বিশেষ করে নারীদের, সহনশীল জীবিকার নেতৃত্ব নিতে ও সারা বছর নিরাপদ পানীয়জল নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে। এই প্রকল্পের আওতায় গঠিত হয়েছে ১,০২০টি নারী জীবিকা গ্রুপ এবং ৩০,০০০-এর বেশি পরিবার উপকারভোগী হয়েছে নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ থেকে। প্রকল্পটি লিঙ্গভিত্তিক রূপান্তরমূলক পরিবর্তন, মূল্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, এবং খুলনা ও সাতক্ষীরায় জলবায়ু সহনশীল পরিকল্পনা ও অভিযোজন কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।